ফয়জান মামলার পুনরাবৃত্তি আর জি করে, বলছেন রেহানা
IIT খড়গপুরের ছাত্রের নির্মম হত্যার প্রায় দুই বছর পর, তার শোকার্ত মা বেঙ্গল পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার নিন্দা করেছেন। আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের ক্ষেত্রে অনুরূপ ব্যর্থতার প্রতিবাদে বিক্ষোভের সময় তার চিৎকার আসে
কলকাতা: আর জি কর মেডিকাল কলেজের ডাক্তারের নৃশংস হত্যা এবং ধর্ষণ নিয়ে দেশব্যাপী প্রতিবাদের মধ্যেই আইআইটি খড়্গপুরে খুন হওয়া ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্র ফয়জান আহমেদের মা রেহানা আহমেদ, পশ্চিমবঙ্গ পুলিসের তীব্র সমালোচনা করেছেন। প্রায় দুবছর ধরে নিজের ছেলের হত্যার ন্যায়বিচারের অপেক্ষায় থাকা রেহানা হতাশা প্রকাশ করে বললেন ‘এটা শুধু আমার ছেলের খুনের ব্যাপার নয়। বাংলার পুলিস এই ধরনের কেসে ধারাবাহিকভাবে ফেল করে চলেছে।’ শরীর ভাল না থাকলেও ফয়জানের মা আর জি কর হত্যাকাণ্ডের খবর রাখছেন মনোযোগ সহকারে। নিজের প্রতিবাদ জানাতে এই প্রতিবেদককে ফোনে বললেন ‘বাংলার পুলিস আমাদের পাশেও দাঁড়ায়নি। এখন দেখছি আবার একই আচরণ। ওরা নিজেদের কাজ ঠিক করে করেনি।’
আর জি করের ডাক্তারির ছাত্রীটির মত ২৩ বছর বয়সী ফয়জানকেও ক্যাম্পাসের মধ্যেই খুন করা হয়েছিল এবং প্রথমে বলা হয়েছিল তিনি আত্মহত্যা করেছেন। কিন্তু কলকাতা হাইকোর্টের হস্তক্ষেপের পর দ্বিতীয়বার ময়না তদন্ত হয় এবং নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত হয় যে ফয়জানকে নৃশংসভাবে খুন করা হয়। রেহানা আরও বললেন ‘আমরা খড়্গপুর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনো সাহায্য পাইনি, কিন্তু ভেবেছিলাম বাংলার পুলিস আমাদের পাশে দাঁড়াবে এবং তাদের কর্তব্য করবে। কিন্তু সেটা হল না। আইআইটি খড়্গপুরের কর্তাদের মত পুলিসও দাবি করেছিল যে আমার ছেলে, একটা থার্ড ইয়ারের ছাত্র, আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু ওরা আদালতকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি। ফয়জান কীভাবে আত্মহত্যা করল তার উত্তর দিতে পারেনি। খড়্গপুর পুলিসের তত্ত্বাবধানে প্রথম যে ময়না তদন্ত হয় তা সঠিকভাবে করা হয়নি। পুলিস লুকোবার চেষ্টা করছিল যে এটা একটা খুন। আদালত জবাব চায় আর ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ ডাঃ রাজীব গুপ্তকে নিযুক্ত করে। উনি আবার অটোপ্সি করতে বলেন। তাতেই পরিষ্কার হয়ে যায় যে এটা খুন।’
হাইকোর্ট একটি বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠন করে এবং মামলা খড়্গপুর পুলিসের হাত থেকে নিয়ে সেই তদন্তকারী দলের হাতে তুলে দেয়। এই তিন সদস্যের তদন্তকারী দলের নেতৃত্বে আছেন আইপিএস অফিসার কে জয়রামন, সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গে পুলিসের দুই অফিসার।
রেহানা বললেন ‘প্রথম দিন থেকে দেখছি, না খড়্গপুর পুলিস না সিট নিজেদের ডিউটি করছে। নইলে খুনিরা ধরা পড়ে যেত আর আমরা ন্যায়বিচার পেয়ে যেতাম। পশ্চিমবঙ্গে পুলিস এমনকি সিঙ্গল বেঞ্চের সিট গঠন করার আদেশের বিরুদ্ধে প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম আর বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন করে। কিন্তু তাঁরাও ওদের দাবি প্রত্যাখ্যান করেন। কিন্তু একবছরের বেশি হয়ে গেল সিট গঠন হয়েছে। এখনো খুনিরা ধরা পড়ল না।’
অন্যদিকে আর জি কর মেডিকাল কলেজে একজন শিক্ষানবিশ ডাক্তার ধর্ষিত এবং খুন হয়েছেন। এক সপ্তাহ আগে তাঁর দেহ ওই কলেজের সেমিনার হলে উদ্ধার হয়। এ ব্যাপারে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ওই ঘটনার পর থেকে কেবল কলকাতা বা পশ্চিমবঙ্গ নয়, সারা ভারতে প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। ১৪ অগাস্ট রাতে বিরাট সংখ্যক প্রতিবাদী, যাঁদের অধিকাংশ মহিলা, ‘রাত দখল করো’ স্লোগান দিয়ে পশ্চিমবঙ্গে রাস্তায় নেমেছিলেন। ইতিমধ্যে কলকাতা হাইকোর্ট এই মামলা সিবিআইয়ের হাতে তুলে দিয়েছে। একাধারে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিও শুক্রবার দোষীদের ফাঁসি চেয়ে পথে নেমেছেন।
উল্লেখযোগ্যভাবে রেহানা বলেন, পশ্চিমবঙ্গের মানুষ যদি ফয়জানের জন্য এবং যাদবপুরের র্যাগিংয়ের শিকার ছেলেটির জন্যে লড়তেন, তাহলে পুলিস, বিশেষত সিট, অনেক মন দিয়ে কাজ করত। তিনি বললেন ‘আমি অনেকবার বলেছি যে ফয়জান মামলার পরিণাম লক্ষ লক্ষ মায়ের জীবনে প্রভাব ফেলবে, যাদের ছেলেমেয়েরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করছে বা কাজ করছে। ন্যায়বিচার হলে অপরাধীরা ক্যাম্পাসে খুন করার আগে দুবার ভাবতে বাধ্য হবে।’