বিরাট নির্বাচনী বিতর্ক: বিজেপি মোদির গ্যারান্টি নাকি কংগ্রেসের ন্যায়পত্র?

Date:

Share post:

২০২৪ এর জাতীয় কংগ্রেস ২০০৯ সালের কংগ্রেসের চেয়ে অনেক বেশি উন্নত, সাধারণ মানুষের অনেক বেশি কাছের। রাহুল গান্ধী ভারত জোড়ো যাত্রায় প্রত্যক্ষ করেছেন গরিব খেটে খাওয়া মানুষের যন্ত্রনা। তারই প্রকাশ ঘটেছে কংগ্রেসের এবারের নির্বাচনী ইশতেহারে। ওদিকে বিজেপির নির্বাচনী ইশতেহারের নাম ‘মোদির গ্যারান্টি’। মূলত সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদকে ভিত্তি করে বিজেপি- র এবারের সংকল্প পত্র। ১৪ টি বিষয়ে তারা জোর দিয়েছে। একটি তূলনামূলক বিশ্লেষণ রাখলেন দেবাশিস মিথিয়া।

দেশের নতুন সরকার গড়তে  শুরু হয়েছে ১৮ তম লোকসভা নির্বাচন। ভোট গ্রহণ চলবে প্রায় দেড় মাস ধরে। তাকে সামনে রেখে প্রচার পাল্টা প্রচারে রীতিমতো সরগরম গোটা দেশ। একসময় নির্বাচনী প্রচারের প্রধান হাতিয়ার ছিল ‘নির্বাচনী ইশতেহার’ বা ‘ইলেকশান ম্যানিফেস্টো’। নির্বাচনী ইশতেহার আসলে রাজনৈতিক দলগুলির প্রতিশ্রুতি পত্র। কোনও বিশেষ রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় এলে দেশের মানুষের জন্য আগামী দিনে তাঁরা কী কী করবেন সেটাই বলা থাকে ইশতেহারে । দারিদ্র্য দূরীকরণ, বেকার সমস্যার সমাধান, কৃষি ও কৃষকের উন্নতি, স্বনির্ভতার মধ্যে দিয়ে মহিলাদের  ক্ষমতায়ন, শিল্প উন্নয়ন ও জি ডি পি র বৃদ্ধি –  কমবেশি এই সব প্রতিশ্রুতিই থাকে নির্বাচনী ইশতেহারে। এছাড়াও সামাজিক ন্যায় বিচারের কথা থাকে। উল্লেখ থাকে বৈদেশিক নীতি কী হবে, দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় দল ক্ষমতায় আসীন হলে কী পদক্ষেপ নেবে।

এখন নির্বাচনী প্রচারে কান পাতলে বোঝা যাবে নির্বাচনী ইশতেহার প্রাসঙ্গিকতা হারিয়েছে । প্রচারে কেউই প্রায় ইশতেহারের ধার মাড়াচ্ছেন না। তবুও ঐতিহ্য মেনে সমস্ত জাতীয় দল এখনও তা প্রকাশ করছে।  নির্বাচনী ইশতেহারের গুরুত্ব তখনই বোঝা যায় যখন কোনো রাজনৈতিক দল সরকার গঠনের পরে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণ করেছেন বা করার চেষ্টা করেছেন। এই লোকসভা নির্বাচনে একদিকে বি জে পি র নেতৃত্বে ৩৮ টি দলের ‘এন ডি এ’ জোট ক্ষমতা পুনর্দখলের লড়াই – এ নেমেছে অন্যদিকে জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ২৬ টি দলের  ‘ইন্ডিয়া’  জোট  বিজেপিকে দিল্লির মসনদ থেকে গদিচ্যুত করতে চাইছে। দেখে নেওয়া যাক, ১৮ তম লোকসভা নির্বাচনে (২০২৪) বিজেপি অথবা তার মূল প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেস সরকারে এলে জনগণকে আগামী দিনে কী কী সুবিধা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে।

‘মোদির গ্যারান্টি’ বনাম ‘কংগ্রেস ন্যায়পত্র’

বিজেপি : ১৪ এপ্রিল শাসকদল বিজেপি এই নির্বাচনের জন্য তাদের নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করেছে। বিজেপি -র নির্বাচনী ইশতেহারের নাম  ‘মোদির গ্যারান্টি’।  মূলত সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদকে ভিত্তি করে বি জে পি- র এবারের সংকল্প পত্র। ১৪ টি বিষয়ে তারা জোর দিয়েছে। বিকশিত ভারতের  চারটি স্তম্ভ – নারীশক্তি, যুবশক্তি, কৃষক ও দরিদ্রদের উন্নতির লক্ষ্যে আগামী দিনে তারা কাজ করবে বলে ঘোষণা করেছে। তারা সরকার গঠন করলে মানুষের আত্ম মর্যাদা ও জীবন যাত্রার গুণগত মান বাড়াতে সব বাড়িতে পাইপযুক্ত গ্যাস এবং সৌরবিদ্যুত  বিনামূল্যে  পৌঁছে দেবে।

কংগ্রেস: উল্টোদিকে বিরোধী দল জাতীয় কংগ্রেস ৭ ই এপ্রিল নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করে জানিয়েছে গত ১০ বছরের বিজেপি-র শাসনকালে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের ন্যায় ব্যবস্থা৷ তা ফেরানোর জন্য কংগ্রেস তাদের নির্বাচনী ইশতেহারের নাম দিয়েছে ‘ন্যায়পত্র’। তাদের ইশতেহারে গুরুত্ব পেয়েছে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রার ৫ টি মূল স্তম্ভ- যুবসমাজ, কৃষক, মহিলা, শ্রমিক ও প্রান্তিক মানুষ। কংগ্রেসের ইস্তেহারের মূল ভিত্তি- ‘কাজ’, ‘স্বাস্থ্য’ ও ‘জনকল্যাণ’।

যুবসমাজের জন্য কর্মসংস্থান

আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে  কম বেশি ১.৮ কোটি যুবক যুবতী প্রথম তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে। যাদের বয়স ১৮-১৯ বছর ।  তাদের মন জয় করতে উভয় দলই তাদের ইশতেহারে তরুণ ভোটারদের কর্মসংস্থান বাড়ানো ও স্বাবলম্বী করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

বিজেপি :

  •  প্রশ্ন ফাঁসের বিরুদ্ধে আইন বাস্তবায়ন করে সরকারি নিয়োগ স্বচ্ছ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে । নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সরকারি শূন্যপদ পূরণ অব্যাহত থাকবে।
  • ভারতকে বিশ্বমানের উৎপাদন কেন্দ্রে পরিণত করার পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ উৎপাদন ক্ষেত্রগুলিতে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির   কাজ চালিয়ে যাওয়া হবে।
  • স্ব-রোজগার প্রকল্পকে উৎসাহ দিতে ‘মুদ্রা যোজনা’-র অধীনে ঋণের পরিমাণ দ্বিগুণ করে ২০ লক্ষ টাকা করা হবে।

কংগ্রেস:

  • ৩০ লাখ সরকারি শূন্যপদে নিয়োগ করবে ।
  • শহরের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের জন্য পরিকাঠামো উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।
  • ২৫  বছরের কম বয়সী  স্নাতক ও ডিপ্লোমাধারীদের এক বছরের অ্যাপ্রেনটিসের ব্যবস্থা করতে নতুন ‘রাইট টু অ্যাপ্রেনটিস অ্যাক্ট’  চালু করবে।
  • কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে ১ লা এপ্রিল, ২০২০ থেকে ৩০ শে  জুন, ২০২১ -এর মধ্যে যোগ্যতা অর্জনকারী পাবলিক পরীক্ষা বসতে অক্ষম আবেদনকারীদের জন্য এককালীন অনুদানের ব্যবস্থা থাকবে।

মহিলাদের উন্নয়ণ

দেশের মোট ভোটারের ৪৯ শতাংশ মহিলা। ফলে তাঁদের মন পেতে উভয় দলই ঝাঁপিয়েছে।

বিজেপি :

  • ৩ কোটি গ্রামীন মহিলাদের লাখপতি দিদি বানাবে।
  • প্রতিটি রান্নাঘরে পাইপের মাধ্যমে রান্নার গ্যাস পৌঁছে দেবে। কর্মজীবী মহিলাদের কর্মস্থানের কাছে হোস্টেল এবং ক্রেসের ব্যবস্থা করবে।
  • স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে সার্ভিস সেক্টরের সঙ্গে যুক্ত করে নতুন আয়ের সুযোগ বৃদ্ধি করবে।
  • নারীশক্তি বন্দন অ্যাক্ট কার্যকর করে লোকসভা ও বিধানসভায় মহিলাদের প্রতিনিধিত্ব সুনিশ্চিত করবে।

কংগ্রেস :

  • মহিলাদের ক্ষমতায়নে ‘মহালক্ষ্মী প্রকল্প’ চালু করার কথা ঘোষণা করেছে। এছাড়াও ভারতের প্রতিটি অতি দরিদ্র পরিবারের সবচেয়ে বয়স্ক মহিলাকে  বার্ষিক ১ লাখ টাকা আর্থিক সাহায্য দেবে তারা। এই ব্যবস্থা চালু থাকবে যতদিন পর্যন্ত না পরিবারটি দারিদ্র্য সীমার উপরে উঠে আসে।
  • ২০২৫ সাল থেকে মহিলাদের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারি চাকরির অর্ধেক সংরক্ষণ করবে।
  • দেশে কর্মজীবী মহিলা হোস্টেলের সংখ্যা দ্বিগুণ করা হবে, প্রতিটি জেলায় কমপক্ষে একটি সাবিত্রীবাই ফুলে হোস্টেল থাকবে।

কৃষকের সম্মান

দেশে কৃষকের প্রকৃত সংখ্যা বিভিন্ন গবেষণায় বিভিন্ন। সংখ্যার এই তারতম্য চোখে পড়লেও ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশনের হিসেব অনুযায়ী ২০২২ সালের শেষে  দেখা যাছে দেশের ৪৩ শতাংশ মানুষ কৃষিতে যুক্ত। চমকপ্রদ বিষয় হোল মহিলাদের ৫৯ শতাংশ কৃষিকাজে যুক্ত। স্বাভাবিক ভাবে নির্বাচনে এদের মন জয় করতে দু’দলই মরিয়া। তাই কৃষকদের উন্নয়নে বিজেপি ও কংগ্রেস উভয়ই বাড়তি গুরুত্ব দিয়েছে।

বিজেপি :

  • প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান নিধি এবং ফসল বীমা যোজনা অব্যাহত থাকবে।
  • এমএসপি সময়-সময় বৃদ্ধি করা হবে। বীজ বোনা থেকে ফসল বিক্রী পর্যন্ত কৃষকের আয় বাড়ানো।
  • মিলেটকে সুপার ফুড হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করা হবে। প্রধানমন্ত্রী মৎস্য সম্পদ যোজনা এবং দুগ্ধ সমবায় সমিতিগুলির প্রসার  ঘটানো হবে।

কংগ্রেস :

  • কৃষকদের স্বামীনাথন কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ন্যূনতম সহায়ক মূল্য(এম এস পি) দেওয়ার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
  • কৃষকদের দীর্ঘদিনের দাবি এম এস পি – র আইনি স্বীকৃতি মান্যতা পাবে।  কৃষিঋণ সংক্রান্ত একটি স্থায়ী কমিশন নিয়োগ করবে – যার কাজ সময়ে সময়ে  কৃষককে  দেও কৃষিঋণের পরিমাপ করা এবং সেই ঋণের কতটা মুকূব করা যায় তা পর্যালোচনা করা।

দারিদ্র্য দূরীকরণ

২০২৩ সালের শেষে দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাসকারি পরিবারের সংখ্যা মোট পরিবারের ১১.২৮ শতাংশ। সংখ্যার হিসেবে ভারতে এখনও ২৩ কোটি মানুষ দরিদ্র।

বিজেপি :

  • আগামী ৫ বছর বিনামূল্যে রেশন বিতরণ অব্যহত থাকবে।
  • ডাল, ভোজ্য তেল, শাক-সবজি উৎপাদনে দেশকে স্বাবলম্বী করে প্রতিটি দরিদ্রের আহার নিশ্চিত করা।
  • প্রতিটি ঘরে পাইপ লাইনের মাধ্যমে পরিশ্রুত পানীয় জল পৌঁছাবে ও পি এম সূর্য ঘর যোজনার মাধ্যমে বিনা পয়সায় বিদ্যুত দেবে।

কংগ্রেস :

কংগ্রেসের ‘ন্যায়’ প্রকল্পের লক্ষ্য এবার ‘গরিবি হঠাও নয়, গরিবি মিটাও’। ক্ষমতায় এলে জাতীয় কংগ্রেস ১০ বছরের মধ্যে ২৩ কোটি মানুষের অভাব দূর করবে ।

স্বাস্থ্য

কোভিড – ১৯ মহামারীর পরে স্বাস্থ্যের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বিজেপি, তার ইশতেহারে, হাইলাইট করেছে তারা কীভাবে এই  সংকট মোকাবিলা করেছে।  কংগ্রেস তার ইশতেহারে রাজস্থান সরকারের মডেলের মতো বীমার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

বিজেপি :

  • সারা দেশে উচ্চ মানের স্বাস্থ্য পরিষেবা দিতে এ আই আই এম এস -এর নেটওয়ার্ককে শক্তিশালী করবে।
  • স্বাস্থ্যসেবার কাঠামো জোরদার করতে  ‘পি এম – এ বি এইচ আই এম’ – কে প্রসারিত করা হবে।
  •  সারাদেশে নাগরিকদের উচ্চমানের স্বল্পমূল্যের ওষুদের জোগান দিতে জনঔষুধী কেন্দ্রগুলির নেটওয়ার্ককে বিস্তৃত করবে।

কংগ্রেস :

  • স্বাস্থ্যসেবাকে সর্বজনীন করতে ২৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ক্যাশলেস স্বাস্থ্য-বীমার রাজস্থান মডেল গ্রহণ করা হবে।
  • প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, হাসপাতাল, ক্লিনিক, প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, মোবাইল হেলথ-কেয়ার ইউনিট, ডিসপেনসারি এবং স্বাস্থ্য শিবিরের মতো জনস্বাস্থ্য কেন্দ্রে সবাই বিনামূল্যে চিকিৎসা পাবেন । বিনামূল্যের স্বাস্থ্য সেবার মধ্যে থাকবে বিভিন্ন প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা, রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা, সার্জারি, ওষুধ, পুনর্বাসন এবং উপশমকারী যত্ন।
  • প্রতি বছর স্বাস্থ্যের জন্য বাজেট বরাদ্দ ধাপে ধাপে বৃদ্ধি করে ২০২৮-২৯ সালে তা মোট ব্যয়ের ৪ শতাংশ করা হবে।

বর্ষীয়ান  নাগরিক

বিজেপি এবং কংগ্রেস উভয়ই বর্ষীয়ান নাগরিকদের জন্য বেশ কিছু প্রকল্প এবং উদ্যোগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বিশেষ করে  স্বাস্থ্য সংক্রান্ত  সমস্যা সমাধানের উপায় প্রতিশ্রুতিতে রেখেছে।

বিজেপি :

  •  ৭০ বছরের বেশি বয়সী প্রবীণ নাগরিকদের জন্য আয়ুষ্মান ভারত যোজনা প্রসারিত করা হবে।
  • প্রবীণ নাগরিকদের সারা দেশে তীর্থযাত্রার সুযোগ বাড়াতে রাজ্য সরকাগুলির সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করবে।

কংগ্রেস :

  •  প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার আইন, ২০১৬ কঠোরভাবে লাগু হবে।
  • জাতীয় সামাজিক সহায়তা কর্মসূচির অধীনে প্রবীণ নাগরিক, বিধবা এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য মাসিক ১০০০ টাকা পেনশনের ব্যবস্থা করবে।
  • প্রবীণ নাগরিকদের জন্য রেল ও বাসে ভ্রমণের ক্ষেত্রে ছাড় পুনরায় চালু করবে।

পরিবেশ সংরক্ষণ

বছরের পর বছর ধরে, রাজনৈতিক ইশতেহারে পরিবেশগত সমস্যাগুলি থাকছে।

বিজেপি :

  • দেশের সমস্ত অঞ্চলে বায়ুর বার্ষিক গড় গুণমানকে  ছুঁতে  এবং তা ধরে রাখতে, ন্যাশনাল ক্লিন এয়ার প্রোগ্রাম কার্যকর করা হবে।  ২০২৯ সালের মধ্যে ৬০ টি শহরে বায়ুর জাতীয়  গুণমান মান কে ছোঁয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
  • ধাপে ধাপে দেশের প্রধান নদীগুলির স্বাস্থ্য ফেরানো  হবে এবং সেই নদীগুলিকে পরিচ্ছন্ন করা হবে।

কংগ্রেস :

  •  বায়ু দূষণের সমস্যা জরুরীভিত্তিতে মোকাবিলা করার জন্য ন্যাশনাল ক্লিন এয়ার প্রোগ্রামকে শক্তিশালী করবে।
  • একটি স্বাধীন পরিবেশ সুরক্ষা এবং জলবায়ু পরিবর্তন কর্তৃপক্ষ গঠন করা হবে। যারা পরিবেশের গুনগত মান রক্ষায় কাজ করবে  এবং ‘জাতীয় ও রাজ্য’ জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত পরিকল্পনাগুলি কার্যকর করবে।

অর্থনীতি

বিজেপি যেমন ভারতকে তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং তেমন-ই কংগ্রেস আগামী দশ বছরে দেশের জিডিপি কে দ্বিগুণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

বিজেপি :

  •  ভারতকে  তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে গড়ে তোলা ।
  • মুদ্রাস্ফীতি হ্রাস  এবং ভারতের অর্থনৈতিক দক্ষতা বৃদ্ধি ।
  • কর্মসংস্থান, স্ব-রোজগার এবং নাগরিকদের জন্য জীবিকার সুযোগ বৃদ্ধি।
  • করদাতারা অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তাই তাদের বাড়তি  সম্মান ।

কংগ্রেস :

  •  আগামী ১০ বছরে জিডিপি দ্বিগুণ করবে।
  •  গিগ ও অসংগঠিত শ্রমিকদের অধিকার সুনির্দিষ্ট ও সুরক্ষার জন্য একটি আইন প্রণয়ন করবে  এবং এদের সামাজিক নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা হবে ।
  • মুক্ত বাণিজ্য এবং নিয়ম-মাফিক  আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্যে সরকার সাহায্য  করবে।
  • কর কাঠামোর বিন্যাস এমন হবে যা কর্মসংস্থান এবং মজুরি বৃদ্ধিতে  সাহায্য করবে পাশাপাশি বিনিয়োগ এবং মুনাফা অর্জনে উৎসাহ দেবে।

জাতীয় নিরাপত্তা

বিজেপি :

  • আরও দক্ষ অপারেশনের জন্য ‘সামরিক থিয়েটার কমান্ড’ পুনরায় প্রতিষ্ঠা করবে।
  •  ভারত-চীন, ভারত-পাকিস্তান এবং ভারত-মায়ানমার সীমান্তে শক্তিশালী পরিকাঠামোর উন্নয়ন ।
  • অতি বামপন্থী দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বসবাসকারী জনগণের কাছে উন্নয়ন ও কল্যাণমূলক প্রকল্পগুলি যাতে পৌঁছায় তা নিশ্চিত করবে।
  • বর্তমান এবং উদ্ভুত হুমকির দ্রুত নিষ্পত্তিতে  সশস্ত্র বাহিনী এবং কেন্দ্রীয় সশস্ত্র পুলিশ বাহিনীকে অত্যাধুনিক অস্ত্র, সরঞ্জাম এবং প্রযুক্তি দিয়ে সাজানো হবে ।

কংগ্রেস :

  • অগ্নিপথ স্কিম বাতিল করা হবে।
  • একটি সংগঠিত ‘জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল’ তৈরি করবে।
  • সিডিএস নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা এবং সামরিক সহমত নিশ্চিত করতে নিয়োগ পদ্ধতিতে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেবে  ।
  • ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৪  ইউপিএ সরকারের আদেশ অনুসারে ওয়ান র‍্যাঙ্ক ওয়ান পেনশন চালু করা হবে।

নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি আর বাস্তবে তা পূরণ করার মধ্যে বিস্তর ফাঁক। সাধারণ মানুষ রুটি রুজির জোগাড় করতে গিয়ে ভুলে যান শাসকদল সরকারে আসার আগে কী কী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। সময় নেই মিলিয়ে দেখার কতটা প্রতিশ্রুতি পূরণ হল! শাসক মানুষের এই ভুলে যাওয়াটাকে কাজে লাগায়। এবারে নির্বাচনে ইশতেহার প্রকাশের সময় বিজেপি  বলেছে, গত ১০ বছরে সরকার চালাতে গিয়ে  সমস্ত প্রতিশ্রুতিই তারা পূরণ করেছে।

পরিসংখ্যান অন্য কথা বলছে। রামমন্দির তৈরির প্রতিশ্রুতি, কাশ্মীরে আর্টিকেল ৩৭০ বাতিল ছাড়া বিজেপি বাকি কোনও নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির ধার দিয়ে যায় নি। প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল প্রত্যেক পরিবারের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ১৫ লাখ টাকা এবং দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাসকারি পরিবারের শতাংশকে এক ডিজিটে নামিয়ে আনার। কারো অ্যাকাউন্টে একটা টাকাও ঢোকেনি। ভারতে এখনও ২৩ কোটি মানুষ দরিদ্র। ২০২৩ সালের শেষে দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাসকারি পরিবারের সংখ্যা ১১.২৮ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে।  অর্থাৎ ইশতেহারের দারিদ্র্য দূরীকরণের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হয়নি।  কয়েকটি বিশেষ ক্ষেত্রকে আলাদা ভাবে চিহ্নিত করে বলা হয়েছিল কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। বছরে ২ কোটি বেকার চাকরি পাবে। কোথায় চাকরি?  ২০১৯ সালে বেকারত্বের হার যেখানে ৫.২৭ শতাংশ ছিল  ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে তা বেড়ে হয়েছে ৮.১১ শতাংশ। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে বলা হয়েছিল  ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলির প্রসার ঘটিয়ে বাড়তি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে। আজ  জলের মত পরিষ্কার কর্মসংস্থান নয় ইলেক্টোরাল বন্ডে টাকা আদায়ের জন্যই এদের বাড়তি সুবিধা দেওয়া হয়েছিল। ২০২২ সালের মধ্যে কৃষকের গড় মাসিক আয় দ্বিগুন করার প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়নি । উল্টে কৃষকদের একটা ভালো অংশকে দিনমজুরে পরিণত করেছে।  স্বামীনাথন কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (এমএসপি ) স্থির করার কথা বললেও বাস্তবে বিজেপি সরকার নিজস্ব ফর্মুলায় চাষের খরচ হিসেব করে এমএসপি নির্ধারণ করেছে। এতে শুধু ধান ও গমেই কৃষকরা ২৯৬ হাজার কোটি টাকা কম পেয়েছেন। সরকার সেই বাঁচানো টাকায়  কৃষকদের মাসিক ৬০০০ টাকা করে অনুদান দিয়েছেন। যেহেতু পিএম কৃষাণ সম্মান নিধির মাধ্যমে এই অনুদান  কৃষকরা পেয়েছেন।  তাই পিএম কৃষানের ফলাও প্রচার চলছে। ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষীদের পেনশনের বিষয়টিও বিশ বাঁও জলে।  কৃষক কল্যাণে ইশতেহারের প্রতিশ্রুতি না রাখলেও সংস্কারের নামে কৃষিকে কর্পোরেট হাতে তুলে দিতে সরকার কৃষি আইন চালু করেছিলেন। যদিও কৃষকদের আন্দোলনের চাপে সরকার তা প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হন। মেক ইন ইন্ডিয়া-প্রকল্পের মাধ্যমে দেশে কর্মসংস্থান, বিদেশী বিনিয়োগ বাড়িয়ে দেশের অর্থনীতিকে  রপ্তানী নির্ভর করে তোলার প্রতিশ্রুতি ছিল নির্বাচনী ইশতেহারে কিন্তু দুঃখের কথা এই যে  ‘ইজ অফ ডুয়িং’ বিজনেসের ক্ষেত্রে যেখানে ২০১৯ সালে ভারতের স্থান ছিল  ৬৩ নম্বরে।  ২০২৩ সালে তার বড় একটা হেরফের হয়নি। ২০২৫ সালের মধ্যে ভারতকে ৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের অর্থনীতিতে পরিণত করার  স্বপ্ন অধরা থেকে গেছে। বিজেপি প্রচার করছে গরিব মানুষকে তারা বিনামূল্যে খাদ্যশস্য সরবরাহ করছেন। কর্মসংস্থান সৃষ্টি না করে বিনামূল্যে খাদ্যশস্য বিতরণ কোনও স্থায়ী সমাধান হতে পারেনা। রাম মন্দির প্রতিষ্ঠাকে বিজেপি ইশতেহারের প্রতিশ্রুতি পূরণ বলে  বিজ্ঞাপন করছে। এটা ভুললে চলবে না মন্দির মসজিদ কখনও গরীবের পেটে ভাত, বেকারের হাতে কাজ দেয় না, বাসস্থানের ব্যবস্থা করে না। আমজনতার বাঁচার ন্যূনতম জিনিষের জোগান দিতে বিজেপি সরকার ব্যর্থ। মোদির আচ্ছে দিন আসলে গড়পড়তা আর ৫ দিনের মতন – ই বা তার চেয়েও খারাপ।

প্রশ্ন হল, কংগ্রেসের দেওয়া নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির গ্রহণযোগ্যতাই বা কতখানি? ২০০৪  ও ২০০৯ এ কংগ্রেসের নির্বাচনী  প্রতিশ্রুতি সাধারণ মানুষের  স্মরণে থাকার কথা নয়। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের পর্যালোচনা বলছে, ২০০৪ থেকে ২০১৪ – এই ১০ বছর কংগ্রেসের  নেতৃত্ত্বে ইউ পি এ সরকার অনেকটাই ইশতেহারমুখী ছিল, বিশেষ করে অর্থনীতির বিষয়গুলিতে। গ্রামীণ এলাকায় কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা বাড়াতে মহাত্মা গান্ধী ন্যাশনাল রুরাল এমপ্লয়মেন্ট গ্যারান্টি অ্যাক্ট – র সফল রূপায়ণ কংগ্রেস ইশতেহারের বড় সাফল্য। এই প্রকল্প অনুযায়ী কোনও আর্থিক বছরে প্রতিটি গ্রামীন পরিবারের একজন প্রাপ্তবয়স্ক সদস্য কমপক্ষে ১০০ দিনের কাজ পাবেন। ২০১৫ সালে এন. সি. এ. ই. আর – এর, সমীক্ষায় দেখা গেছে যে মনরেগা তে ২০০৪-০৫ সাল  থেকে ২০১২-১৩ সালের মধ্যে ১৪  মিলিয়ন মানুষ দারিদ্র্যের হাত থেকে নিস্তার পেয়েছেন।  ২০০৬ সালে শুরু  হওয়া এই প্রকল্পে ২০১২-১৩ পর্যন্ত প্রায় ৪.৯৮ কোটিরও বেশি গ্রামীন পরিবারের কর্মসংস্থান হয়েছে। কংগ্রেস সরকারের আরও একটি সাফল্য খাদ্য নিরাপত্তা আইন পাশ। খাদ্য নিরাপত্তা আইনে অন্ত্যোদয় অন্ন যোজনার মাধ্যমে দরিদ্রতম পরিবারগুলিকে মাসে ৩৫ কেজি খাদ্যশস্য ভর্তুকি মূল্যে দেওয়া হয়েছে এবং অন্যান্য দরিদ্র পরিবারকে ভর্তুকি যুক্ত হারে জনপ্রতি মাসিক ৫ কেজি খাদ্যশস্য পেয়েছে। ইউ পি এ আমলে খাদ্যে ভর্তুকি তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছিল। এতে গ্রামীণ জনগণের ৭৫ শতাংশ  ও শহুরে মানুষের ৫০ শতাংশ ‘লক্ষ্য নির্ধারিত সরকারি গণ বণ্টন ব্যাবস্থায়’ ভর্তুকিতে খাদ্যশস্য পেয়েছেন। গর্ভবতী ও সদ্য মা হওয়া মহিলাদের খাবার এবং মাতৃত্বকালীন সুযোগ সুবিধার জন্য ন্যূনতম ৬০০০ টাকার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কৃষক কল্যাণে ২০০৪ সাল থেকে গম এবং ধানের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য দ্বিগুণ করা হয়েছিল। ২০১২-১৩ সাল পর্যন্ত ৬৫০  লাখের বেশি কৃষক ব্যাঙ্ক ঋণ পেয়েছিলেন । ইউ পি এ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে ভারতে মাথাপিছু আয় প্রায় তিনগুণ বেড়েছিল। বিশ্বব্যাপী দুটি মন্দা সত্ত্বেও ইউপিএ সরকারের আমলে দেশে গড় জিডিপি-র বৃদ্ধি হয়েছিল ৭.৭ শতাংশ ।দারিদ্র্যের হার গড়ে বার্ষিক দুই শতাংশ হ্রাস পেয়েছিল। ৬ থেকে ১৪ বছর বয়সীদের বিনা পয়সায় বাধ্যতামূলক শিক্ষার আওতায় আনতে চালু হয়েছিল রাইট টু এডুকেশন অ্যাক্ট। এর ফলে বিদ্যালয় শিক্ষায় ড্রপ আউটের হার কমেছিল এবং শিক্ষার প্রসার অনেকটাই হয়েছিল। জনস্বাস্থ্যে ধারাবাহিক বিনিয়োগ শিশু ও মাতৃ মৃত্যুর হার অনেকটা কমিছিল। এছাড়া ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন এর জন্য আধার কার্ডের ধারণা কংগ্রেস নেতৃত্বে চলা ইউপিএ সরকারের-ই ।এগুলি সবই কংগ্রেসের ইশতেহারে ছিল।

২০২৪ এর জাতীয় কংগ্রেস ২০০৯ সালের কংগ্রেসের চেয়ে অনেক বেশি উন্নত, সাধারণ মানুষের অনেক বেশি কাছের। রাহুল গান্ধী ভারত জোড়ো যাত্রায় প্রত্যক্ষ করেছেন গরিব খেটে খাওয়া মানুষের যন্ত্রনা। তারই প্রকাশ ঘটেছে কংগ্রেসের এবারের নির্বাচনী ইশতেহারে। ইন্দিরা গান্ধীর ঘরানা ফিরিয়ে এনে কংগ্রেস তাদের ইশতেহারে বলেছে, আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে যদি কংগ্রেস এবং ‘ইন্ডিয়া’ জোট বিজয়ী হয় তাহলে  তারা দেশ থেকে দারিদ্র্য দূর করবে। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী কংগ্রেসের হয়ে নির্বাচনী প্রচারে  বলেছেন  – ভারতের প্রত্যেক দরিদ্র পরিবারের একজন মহিলাকে মাসিক ৮ হাজার ৫০০ টাকা করে, বছরে ১ লক্ষ টাকা দেবে তাঁদের সরকার। এই ব্যবস্থা চালু থাকবে যতদিন পর্যন্ত না পরিবারটি দারিদ্র্য সীমার উপরে উঠে আসে। এভাবেই ভারত থেকে দারিদ্র্য দূর করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।

এখন অপেক্ষা মানুষ কার প্রতিশ্রুতিতে ভরসা করেন।  বি জে পি – র ‘মোদির গ্যারান্টি’ তে না কংগ্রেস ন্যায়পত্র। এর প্রমাণ পেতে আগামী ৪ ঠা জুন অবধি অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় কী?

 

এটি ইংরেজিতে প্রকাশিত প্রতিবেদনের একটি অনুবাদ

spot_img

Related articles

Garlands for Accused, Silence for Victim: Gita Path Assault Survivor Gets No Support

Eight days after a mob attack during Kolkata’s Gita Path event, patty seller Sheikh Riyajul remains traumatised and jobless. His Rs 3,000 earnings were destroyed, and the five accused walked free on bail. With no help from authorities or society, fear and financial pressure may force him to return.

Vande Mataram and the Crisis of Inclusive Nationalism: A Minority Perspective India Can’t Ignore

As India marks 150 years of Vande Mataram, political celebration has reignited long-standing objections from Muslims and other minorities. The debate highlights tensions between religious conscience, historical memory, and the risk of imposing majoritarian symbols as tests of national loyalty.

Bengal SIR Exercise Reveals Surprising Patterns in Voter Deletions

ECI draft electoral rolls show 58 lakh voter deletions in West Bengal. Data and independent analysis suggest non-Muslims, particularly Matuas and non-Bengali voters, are more affected. The findings challenge claims that voter exclusions under the SIR exercise primarily target Muslim infiltrators.

A Veil Pulled, a Constitution Crossed: The Nitish Kumar Hijab Controversy

A video showing Bihar Chief Minister Nitish Kumar pulling Dr Nusrat Parveen’s veil during an official event has sparked constitutional concern. Critics say the act violated bodily autonomy, dignity, and Article 21, raising questions about state restraint, consent, and the limits of executive power in a democracy.