বিশ্বজুড়ে

ইসলামোফোবিয়ার বিরুদ্ধে সংহতি প্রকাশ করে, কলকাতার পণ্ডিত আন্তঃধর্মীয় বোঝাপড়ার পক্ষে

আন্তর্জাতিক ইসলামোফোবিয়া দিবস উপলক্ষে, বুদ্ধিজীবীরা সিএএ (CAA) এবং এনআরসি (NRC)-এর পরিপ্রেক্ষিতে ইসলামোফোবিয়া নিয়ে আলোচনা করেছেন। এরপর নো ইওর নেবার-এর বার্ষিক আন্তঃধর্মীয় ইফতার অনুষ্ঠান 'দোস্তি কি ইফতারি'ও আয়োজন করা হয়।

কলকাতা: যখন ভারতে ঘৃণামুলক বক্তব্য এবং ইসলামফোবিক সমালোচনাগুলি শীর্ষে রয়েছে, তখন তাদের মোকাবেলা করার সেরা উপায় কী হবে? এর উত্তর দিতে, 150 জনেরও বেশি পণ্ডিত, লেখক,শিক্ষাবিদ, গবেষক, প্রাক্তন আমলা, সমাজকর্মী এবং সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির সদস্যরা 15 মার্চ পালিত আন্তর্জাতিক ইসলামোফোবিয়া দিবসের একটি অনুষ্ঠানে একত্রিত হন।

এই সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন  অধ্যাপক ইপ্সিতা হালদার, লেখক বিশ্বেন্দু নন্দ, গবেষক ও সমাজকর্মী অধ্যাপক রাজেশ্বর সিনহা, সাংবাদিক ও লেখক সৌভজিৎ বাগচী এবং আহম্মদ হাসান ইমরান। সঞ্চালক ও গবেষক সাবির আহমেদের সমন্বয়ে গঠিত প্যানেলে আলোচনায়  শুধু দেখা যায়নি, উঠে এসেছে  ইসলামোফোবিয়ার সাম্প্রতিক উত্থান। শুধু বাংলার রাজনৈতিক ক্ষেত্রেই নয়, স্কুল-কলেজেও কিভাবে তুলে ধরা যায় এবং সম্ভবত কীভাবে এই  ক্রমবর্ধমান অসহিষ্ণুতার অবসান ঘটাতে পারা যায় সেটাও।

বিশিষ্ট সাংবাদিক এবং লেখক সৌভোজিৎ বাগচী বলেন “আমাদের বুঝতে হবে যে ভারতের শরণার্থী সমস্যা সমাধানের জন্য সিএএ প্রয়োগ করা হয়নি। যদি সেটাই হয়ে থাকে, তাহলে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে পাস হওয়া সত্ত্বেও কেন এই আইনটি সাধারণ নির্বাচনের মাত্র চার সপ্তাহ আগে কার্যকর করা হয়েছে? নির্বাচন শেষ হয়ে গেলে, এটিকে আবার ট্যাঁকে তুলে রাখা হবে এবং আবার পরবর্তী নির্বাচনে আবার বের করে আনা হবে ঝোলা থেকে” । তিনি আরও যুক্ত করেন যে সিএএ  বাস্তবায়নের পুরো বিষয়টি উত্তর ও মধ্য ভারতের ভোটারদের মেরুকরণের একমাত্র এজেন্ডা নিয়ে করা হয়েছে।

তবে সহ-প্যানেলিস্ট অধ্যাপক রাজ্যেশ্বর সিনহা ভিন্ন মত পোষণ করেছেন।তিনি বলেন  “যখন নতুন ভারতের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি একটি নির্দিষ্ট অংশের মানুষকে পিছনে ঠেলে দিচ্ছে তখন  অন্য একটি অংশের মানুষকে দাবি করতে দেখা যাচ্ছে যে সবকিছুই তাদের। এবং সময়ের সাথে সাথে তাদের এই কণ্ঠস্বর আরও জোরে হবে। আর যদি সময়ের সাথে সাথে সিএএ এবং এনআরসি নিয়ে আরও গোলমাল করতে দেখা যায় তবে, সময়ের প্রয়োজন কী?”

তিনি আরও সংযোজন করেন যে “আমাদের এমন কর্মসূচী সংগঠিত করতে হবে যা আমাদেরকে ছোট ছোট স্তরে জনসাধারণের কাছে পৌঁছানোর সুযোগ দেবে ও সংলাপ এবং আলোচনা শুরু করবে যা বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে যে ক্রমাগত বিস্তৃত বিভাজন সেটা কম করবে,” ।

ইসলামোফোবিয়া ইন্টারফেইথ ইফতার বুদ্ধিজীবী কলকাতা সিএএ এনআরসি

আলোচনার সময়,লেখক  বিশ্বেন্দু নন্দ এই সত্যটি তুলে ধরেছিলেন যে ইসলামোফোবিয়া ভারতে নতুন কিছু নয়। “আমরা আজ যে ইসলামোফোবিয়া দেখতে পাচ্ছি তা হল প্রথম ক্রুসেডের সময় বপন করা ঘৃণার অবশিষ্টাংশ।”

তরুণদের মধ্যে ইসলামোফোবিয়া তৈরি করতে কীভাবে যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যম কীভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে শ্রদ্ধা ওয়াকার মামলার কথা উল্লেখ করেন, আল্টনিউজ-এর প্রতীক সিনহা। তিনি বলেন “আমরা এমন এক যুগে আছি,  একটি শিশু যখন টিভি চ্যানেল চালু করার পর যে চ্যানেলেই যায়, সেখানে কেবল একটি খবরই শোনা যায় যে, কীভাবে একজন মুসলিম ব্যক্তির হাতে শ্রদ্ধাকে হত্যা করা হয়েছিল ।এই প্রেক্ষাপটেই, বর্তমান ভারতের যোগাযোগ বা সংবাদ প্রচারের সমস্ত মাধ্যম  আপোস করে যাচ্ছে। যার ফলে, বর্তমান ভারতীয় বাচ্চাদের মধ্যে একশ্রেণীর বাচ্চার এই তির্যক ধারণা নিয়ে বড় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে যে, মুসলমানদের বিশ্বাস করা যায় না বা তারা খারাপ।” তিনি আরও ব্যাখ্যা করেছিলেন যে কীভাবে ক্ষমতাসীন দল এবং তাদের কর্মীরা একটি নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীকে বদনাম করার জন্য সমস্ত ধরণের মিডিয়া এবং তথ্যের উত্স ব্যবহার করছে এবং ফলস্বরূপ মুসলমানদের টার্গেট করার জন্য, কারও দ্বারা সংঘটিত অপরাধের প্রতিটি সম্ভাব্য ঘটনাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যাবহার করছে। তিনি আরও যোগ করে বলেন, “যে গোষ্ঠীগুলি এই ধরনের প্রচারের বিরোধিতা করে তাদের পক্ষে সঠিক উৎস  এবং মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম গঠন করা বা পরিচালনা করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ।”

ইভেন্টটি যৌথভাবে মাইনোরিটি  কাউন্সিল অফ বেঙ্গল (MCB) এবং KYN দ্বারা সংগঠিত হয়েছিল, এটি  একটি সামাজিক উদ্যোগ যার লক্ষ্য আন্তঃধর্মীয় কথোপকথন এবং সামাজিক সম্প্রীতি প্রচার করা, সারা বছর জুড়ে বিভিন্ন কর্মসূচীর মাধ্যমে। যার মধ্যে রয়েছে আশেপাশের স্থান ঘুরতে যাওয়া, আলোচনা এবং অন্যান্য বিভিন্নধরনের কার্যক্রম।

প্রতি বছর ন্যায় নো ইয়োর নেবার (KYN) দ্বারা আয়োজিত  “দোস্তি-কি-ইফতারী” দিয়ে কর্মসূচীর ইতি টানা হয়।

সবশেষে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ডঃ মোহাম্মদ রেয়াজ KYN এর একজন সক্রিয়  সদস্য, সকল অংশগ্রহণকারীদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

 

এটি ইংরেজিতে প্রকাশিত প্রতিবেদন। অনুবাদ করেছেন শাহ নূর আখতার।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button