ঝাড়খণ্ড

বিজেপিতে যোগ দিলেন একদা দেশদ্রোহে অভিযুক্ত সাকির

শাকির হুসেন, প্রাক্তন দুই বারের মুখিয়া, তার পঞ্চায়েত নির্বাচনের মনোনয়নের সময় তার মনোনয়ন সমাবেশে "পাকিস্তান জিন্দাবাদ" স্লোগান দেখানোর একটি ভিডিও দেখানোর পরে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগের সম্মুখীন হন। প্রমাণের অভাবে খালাস পাওয়ার পর তিনি এখন যোগ দিয়েছেন ভারতীয় জনতা পার্টিতে

গিরিডি/রাঁচী: ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ স্লোগান দেওয়া হয়েছে বা পাকিস্তানের ক্রিকেট দলকে সমর্থন করা হয়েছে – একথা বলে ভারতের দক্ষিণপন্থীরা প্রায়শই মুসলমানদের বদনাম করে; এমনকি দেশদ্রোহের মামলাও ঠুকে দেওয়া হয় ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষের নামে। গতবছর এপ্রিল মাসে একটি ভিডিও ছড়িয়েছিল, যাতে দেখা যাচ্ছিল সাকির হুসেন বলে একজন ঝাড়খণ্ডের পঞ্চায়েত নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন জমা দিতে যাচ্ছেন এবং ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ স্লোগান দেওয়া হচ্ছে। এই সাকির দুবার মুখিয়া নির্বাচিত হয়েছেন এবং তৃতীয়বারের জন্য মনোনয়ন জমা দিতে যাচ্ছিলেন। এই ভাইরাল ভিডিওটি সমস্ত মূলধারার খবরের চ্যানেল সম্প্রচার করেছিল এবং দক্ষিণপন্থী ইনফ্লুয়েন্সাররা সোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করেছিলেন। অনতিবিলম্বে সাকিরকে ভারতীয় দণ্ডবিধির সেকশন ১২৪এ (দেশদ্রোহ) এবং সেকশন ১৫৩এ (জনগণের শান্তিভঙ্গ) ধারায় অভিযুক্ত করা হয় এবং গ্রেফতার করা হয়।

সাকিরের সঙ্গে আরও চারজন কারারুদ্ধ হন। সাকির জেল থেকেই নির্বাচনে লড়েন এবং পরাজিত হন। কিন্তু বেশকিছু ভুয়ো খবর যাচাইকারী সংস্থা প্রমাণ করেছিল যে ওই ভিডিওটি ভুয়ো। প্রযুক্তিগত কারচুপি করা বানানো হয়েছে। সাকিরের মিছিল থেকে মোটেই ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ স্লোগান দেওয়া হয়নি। অথচ সাকিরকে ২৩ দিন জেলে থাকতে হয়েছিল এবং পরে পুলিস এই ঘটনার কোনো প্রত্যক্ষদর্শী খুঁজে পায়নি, আদালতে মামলা খারিজ হয়ে যায়।

রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযুক্ত বিজেপিতে মুখিয়া গিরিডিহ ঝাড়খণ্ডে যোগ দিয়েছেন
রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযুক্ত বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন শাকির হুসেন

রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযুক্ত বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন

সেই সাকির গত বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) বিজেপিতে যোগ দিলেন। তাঁকে বিজেপির রাজ্যস্তরের নেতারা সাদরে আপন করে নিয়েছেন। বহু পার্টিনেতার উপস্থিতিতে বিজেপির রাজ্য সভাপতি এবং রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বাবুলাল মারান্ডি সাকিরের গলায় মালা পরিয়ে তাঁকে স্বাগত জানান। তিনি প্রাক্তন মুখিয়ার সদলবলে বিজেপিতে যোগ দেওয়া নিয়ে এক্স হ্যান্ডেল থেকে পোস্টও করেন।

সাকির নিজে ইনিউজরুমকে বলেন ‘আমি বাবুলাল মারান্ডির কাজকর্ম পছন্দ করি, তাই ওঁর নেতৃত্বে কাজ করতে চেয়েছিলাম। তাই বিজেপিতে যোগ দিলাম।

কিন্তু এই দলই তাঁকে ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ স্লোগান দেওয়ায় অভিযুক্ত করেছিল না? জিজ্ঞেস করতে সাকির বললেন ‘আমাকে বলা হয়েছে যে কোনো স্থানীয় লোক ওই কাজে যুক্ত ছিল না। কিছু বাইরের লোক কাণ্ডটা ঘটিয়েছিল।’

তবে সাকিরের নিজের পরিবারও এই সিদ্ধান্তে খুশি নয়। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক পরিবারের এক সদস্য জানালেন “যখন সাকিরের বিরুদ্ধে পাকিস্তান জিন্দাবাদ বলার অভিযোগ আনা হয়েছিল, তখন গ্রামের যে লোকেরা এবং পরিবারের যারা ওর পাশে দাঁড়িয়েছিল, তারা বিজেপিতে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত মোটেই সমর্থন করছে না। আমরা ওকে বুঝিয়েছিলাম যে এই আদর্শের লোকেরাই ওর জীবনের সবচেয়ে খারাপ সময়টার জন্যে দায়ী। তাই আটকানোর চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু সাকির একরোখা হয়ে গেছিল।”

সাকিরের পঞ্চায়েত ডোকোডিহি গান্ডে বিধানসভা এবং কোডারমা লোকসভা এলাকার অন্তর্গত। দুটি আসনেই একসঙ্গে নির্বাচন হতে চলেছে। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনের স্ত্রী কল্পনা সোরেন এবার ওই কেন্দ্রের উপনির্বাচনে ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার প্রার্থী হচ্ছেন। বিজেপি প্রত্যেকটি ভোটের জন্য লড়াই করছে কারণ কল্পনা ভোটারদের ব্যাপক সহানুভূতি পাবেন বলে মনে করা হচ্ছে।

 

এটি ইংরেজিতে প্রকাশিত প্রতিবেদনের একটি অনুবাদ

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button